বুয়েটে প্রতিদিন আসছি, যাচ্ছি, ক্লাস নিচ্ছি, শহীদ স্মৃতি হলে বসবাস করছি। ফলে সহশিক্ষক, বন্ধু-বান্ধব আর ছাত্রছাত্রিদের সাথে নিয়মিত ভাবের আদান প্রদান তো চলছেই। সেই সাথে নিত্যনতুন বিষয় সম্পর্কে জানা হচ্ছে, আলোচনা হচ্ছে। নিজের, দেশের আর সমগ্র পৃথিবীর নানা ঘটনা আর রটনা নিয়ে চায়ের টেবিলে ঝড় তুলছি - এ সব মিলিয়েই আমার দিনলিপি...


সবাই মিলে খেলছে বাংলাদেশ

১৩ মার্চ, ২০১১। এখন রাত ৮:৪০। আমি ডিপার্টমেন্টে একটু আঁতলামীর চেষ্টা করছি। খানিকক্ষণ আগেই এক ছাত্রের ফোন এলো।

"স্যার, আমরা অমুক কোর্সের ছাত্র। আপনার সাথে আমাদের কাল সকালে ক্লাস ছিল।"
"হ্যাঁ, বল। কি ব্যাপার?"
"আমরা স্যার কাল অটো নিতে চাই! ক্লাস করবো না।"

এটুকু শুনেই আপনা আপনি হাসি পেল। বিশ্বকাপের উসিলায় সহজ সরল আবদার। সত্যি বলতে, আমি নিজেও খানিকক্ষণ আগে ভাবছিলাম, কাল ক্লাসে গিয়ে কি দেখবো কেউ আসে নি, নাকি ছাত্ররা আগেই জানাবে। কাল যে বাংলাদেশের খেলা। আর সে উপলক্ষে বুয়েট তো বটেই, সারা দেশে কোন কাজকর্ম চলবে বলে মনে হয় না। বিশেষ করে গত ম্যাচে ইংল্যান্ডের সাথে নাটকীয় জয়ের পর সবার আকর্ষণ আরও বেড়েছে। আমার নিজেরও আকর্ষণ যথেষ্ঠ, তবে ছাত্রদের সাথে সেটার কোথায় যেন একটা মাত্রাগত পার্থক্য আছে।

ব্যাপারটা আমি আমার কলিগদের মধ্যেও লক্ষ্য করেছি। আজ বিকেলেই তো, আমার পরিচিত ভিন্ন ডিপার্টমেন্টের দু'জন প্রায় আমার সমবয়সী শিক্ষক নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছিলেন এ ব্যাপারে যে, কাল যদি ছাত্ররা ল্যাব ফাঁকি দিতে চায় তবে সেটা সহ্য করা হবে না, কেননা ল্যাব গুলোর সময়সীমা সীমিত। তার পরপরই তারা পরদিনের খেলায় বাংলাদেশের সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা করলেন, এবং খেলাটা যে রোমহর্ষক হবে তা সম্পর্কে একমত হলেন। আগামীকাল ল্যাব নিতে হলে ছাত্রদের সাথে তারাও যে প্রায় আড়াই ঘন্টা খেলা মিস করবেন সে ব্যাপারটা কিন্তু তারা সানন্দে মেনে নিয়েছেন। এটা হয়তো দায়িত্ববোধ। অথবা, হয়তো এই উপলব্ধি যে, এই খেলার জন্য দেশের সামগ্রিক তৎপরতাকে সারাদিনের জন্য স্তম্ভিত করে রাখাটা বোকামি। কিন্তু আমি ভাবছি, এই কিছুদিন আগেও তো আমি এবং আমার এই সহশিক্ষকেরা ছাত্র ছিলাম, এখনও তো মাস্টার্সও শেষ হয় নি, অথচ এই দায়িত্ববোধ বা এরকম উপলব্ধি তো এতকাল হয় নি! এটা এলো কোথা থেকে? 

ছাত্ররা ক্লাসে না এলে ক্লাস হবে কি করে? ক্লাস না হলে কি আমার সুবিধা? তা হলে তো ছাত্রদের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে আমার আনন্দে থাকা উচিত। কিন্তু কই, আনন্দ তো লাগছে না! বরং চিন্তা হচ্ছে।

সারা দেশের লোক যদি এভাবে একদিন নিজেদের কাজ বন্ধ রাখে তাহলে দেশও কি একদিন পিছিয়ে গেল না?

 


কখন বুয়েটকে আমার অনেক অচেনা লাগে?


১. যখন শিক্ষকদের হলের ঠিক পাশেই আহসানউল্লাহ-নজরুল হলের ক্যান্টিনে মার খেতে থাকা কোন ছাত্রের আর্তনাদ শুনতে পাই!
২. যখন তখন যে কেউ (মূলত ছাত্রছাত্রিরা) বুয়েট শহীদ মিনারে জুতো পায়ে উঠে বসে, প্রেম করে, চা-সিগারেট খায় - ব্যাপারটা দিন দিন অসহ্য হয়ে উঠেছে।
৩. বুয়েটের মূল ফটকের উপরে বা আশেপাশে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের (ইদানিং নেতাদের ছবিসহ) পোস্টার বা ব্যানার যখন ঝুলতে দেখি...
৪. যখন চোখের সামনে দেখতে পাই বুয়েটে যে কোন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে...
৫. যখন শিক্ষকদের বাসভবনে চোর ঢুকে ল্যাপটপ আর অন্যান্য দামি জিনিস চুরি করে নিয়ে যায়...
৬. যখন দেখি বুয়েটের অধিকাংশ মেধাবী ছেলে দেশের জন্য প্রয়োজনীয় এমন বিষয়ে গবেষণা না করে শুধু বিদেশ ভ্রমণের আশায় কিছু উচ্চমার্গীয় বিষয়ে গবেষণায় নিজেদের নিয়োজিত করে...
৭. যখন কিছু ছাত্র ও কখনও কখনও কিছু শিক্ষকের বেখেয়াল ও অবহেলায় বুয়েটে প্রতিদিন দেদারসে বিদ্যুৎ ও পানযোগ্য পানির অপচয় হয়।
৮. যখন শুনি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নিয়োগের ব্যাপারে বুয়েট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও দুর্ণীতির অভিযোগ উঠেছে।
৯. বুয়েটের হলগুলোতে নবাগত ছাত্রদের উপর সিনিয়র ছাত্রদের লাগামহীন মানসিক নির্যাতনের ঘটনা যখন শুনতে পাই।
এবং অবশ্যই,
১০. বুয়েটের কিছু তথাকথিত ছাত্র যখন খেলা দেখা বা অন্য কোন ফালতু অযুহাতে বুয়েটের সেশনগুলোকে ক্রমাগত পিছিয়ে দিতে থাকে।


Topic: দিনলিপি

Date: 19/06/2013

By: Sahid

Subject: দিনলিপি

Amra student ra apnake eijonno khub posondo kori, sir. respect from heart.

—————

Date: 16/09/2012

By: নাজিয়া

Subject: দিনলিপি

খুব ভাল লাগল

—————

Date: 23/03/2011

By: A

Subject: #

Good point.

—————

Date: 03/04/2011

By: A

Subject: Re: #

Nice...

—————